মােবাইল গেম খেলার প্রতিবাদ করায় কোপে দাদাকে খুন
ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত মা • বিষ খেয়ে আত্মঘাতী অভিযুক্ত যুবক
চন্ডিপুর: মােবাইল গেম খেলার প্রতিবাদ করায় দাদাকে নৃশংসভাবে খুপিয়ে খুন করে আত্মঘাতী হল ভাই। ছােট ছেলের হাত থেকে বড় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে ভােজালির কোপে গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁদের মাও! রবিবার ভাের ৪টে নাগাদ মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে চণ্ডীপুর থানার ওসমানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুলতানপুর গ্রামের মৃত দুই ভাইয়ের নাম সূর্যকান্ত মণ্ডল (২৬) ও চন্দ্রকান্ত মণ্ডল(২১)। গুরুতর জখম, তাদের মা কাল রানি মণ্ডল তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গােটা ঘটনায় এলাকায় শােকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিস হার তদন্ত শুরু করেছে। | স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর দুই ছেলেকে নিয়ে কাজলদেবী সুলতানপুরে বাপেরবাড়ি পাশে বাড়ি বানিয়ে থাকতেন। দুই ছেলেকে নিয়ে সংসারে কোনও অশান্তি ছিল না। বড় ছেলে সূর্যকান্ত শিয়ালদহে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন।
ছোট ছেলে চন্দ্রকান্ত ইদানীং মােবাইল গেমে প্রচণ্ড আসক্ত হয়ে পড়েন। সেই কারণে বাড়ির কাজকর্ম ঠিকমতাে করতেন না। সর্বক্ষণ মােবাইলে গেম খেলতেন। এক সপ্তাহ আগে নিজেদের জমিতে ধান রােয়ার সময় তা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা হয়। ধান রােয়ার কাজে ভাইকে মাঠে যেতে বলেছিলেন সূর্যকান্ত। মােবাইল গেমের নেশায় সেকথা শােনেননি চন্দ্রকান্ত! এনিয়ে | দুজনের ব্যাপক ঝগড়াঝাটি হয়। চন্দ্রকান্ত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাঁদের মামা সুধাংশু ঘটক বাড়িতে এসে সব মিটমাট করে দিয়েছিলেন। মামার হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও দাদার প্রতি আক্রোশ পুষে রেখেছিল চন্দ্রকান্ত। এদিন ভােরে সূর্যকান্ত ঘুমাচ্ছিলেন।
সেই সময় হাঁসুয়া দিয়ে তাঁকে এলােপাথাড়ি কোপান চন্দ্রকান্ত। বড় ছেলের আর্তনাদে ঘুম ভাঙে মায়ের। ছোট ছেলের হাত থেকে বড় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর মাথাতেও হাঁসুয়ার কোপ পড়ে। | পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হাঁসুয়ার কোপে অত্যধিক রক্তক্ষরণে বাড়িতেই মারা যান সূর্যকান্ত। বাড়িতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন পর কাজলদেবী। তারপরই চন্দ্রকান্ত বাড়ি থেকে চম্পট দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়িতে এসে মা ও ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে দুই যুবকের মামা এসে মাছেলেকে চণ্ডীপুরের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করান। এরই মধ্যে খবর আসে, বাড়ি থেকে দুই কিলােমিটার দূরে ভূপতিনগর থানার সরবেড়িয়া গ্রামে বিষ খেয়ে রাস্তার উপর বেহুশ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। চন্দ্রকান্ত। ভূপতিনগর থানার পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক নিয়ে যায়। সেখান থেকে চন্দ্রকান্তকে তমলুক জেলা হাসপাতালে রেফার করার পর মারা যান। এদিকে চণ্ডীপুরের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও কাজলদেবীকে তমলুক জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়।
এদিন হাসপাতালে শুয়ে কাজলদেবী বলেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। কীভাবে ঘটনা ঘটল কিছুই জানি না। নিহত দুই যুবকের মামা সুধাংশুবাবু বলেন, কীভাবে এরকম ঘটনা ঘটল জানি না। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কালীপদ মির্ধা বলেন, মােবাইল গেমের আসক্তি থেকে এরকম একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই, সরকার এধরনের সর্বনাশা গেম বন্ধে উদ্যোগী হােক।। | চণ্ডীপুর থানার ওসি সুকমল ঘােষ বলেন, চন্দ্রকান্ত মােবাইল গেমে আসক্ত হয়েছিলেন। সাতদিন আগে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা হয়। তখন থেকেই রাগ পুষে রেখেছিলেন চন্দ্রকান্ত। সেই রাগ থেকেই এদিন ভােরে সূর্যকান্তকে কোপান চন্দ্রকান্ত। ঘটনাস্থলেই মারা যান সূর্যকান্ত। তারপর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বিষ খান চন্দ্রকান্ত। হাসপাতালে তাঁরও মৃত্যু হয়।।